ভূমিকাঃ
প্রাকৃতির সুরম্য লীলানিকেতন, গজারি, শাল-পিয়ালে আচ্ছাদিত গাজীপুর ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড উচ্চ বিদ্যালয় গাজীপুর জেলার একটি অন্যতম স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বর্তমান অবস্থা একদিনে রচিত হয়নি। একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিদ্যালয়টি আজকের অবস্থানে উপনীত হয়েছে। স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে বাংলাদেশ সমরাস্ত্র কারখানা তার প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পায় এবং ক্রমশ বাড়তে থাকে এর কলেবর ও লোকবল। ছায়া সুনিবিড় দৃষ্টিনন্দন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা শালবন এলাকায় ১৯৬৮ সালে কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে ও তত্ত্বাবধানে ৬.৬৯১ একর সি শ্রেণিভূক্ত জমির উপর শিক্ষার চাহিদা মোকাবেলা করার মানসে প্রাথমিক বিদ্যালয়টি স্থাপন করা হয়। ১৯৭১ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়টি উচ্চ বিদ্যালয়ে উন্নীত করা হয়। ১৯৭২ সালে ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের কাযক্রম শুরু হবার পর কারখানা কর্তৃপক্ষ উচ্চ বিদ্যালয়টিকে ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের নিকট হস্তান্তর করে। অদ্যবধি বিদ্যালয়টি গাজীপুর ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড উচ্চ বিদ্যালয় নামে সামরিক ভূমি ও সেনানিবাস অধিদপ্তর, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণে গাজীপুর ক্যান্টনমেন্ট কর্তৃক পরিচালিত হচ্ছে।
বিদ্যালয়ের অবস্থান অবকাঠামো ও পরিসংখ্যানঃ
গাজীপুর ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড কর্তৃক গাজীপুর ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড উচ্চ বিদ্যালয়টির পরিচালার দায়িত্বভার গ্রহণের পর প্রাথমিক শাখাকে বালিকাদের জন্য আলাদাভাবে ২.০০৯ একর জমির উপর পৃথক ভবন নির্মানপূর্বক স্থানান্তর করা হয়। যা মূলত উচ্চ বিদ্যালয় ভবন হতে প্রায় অর্ধ কিলোমিটার দক্ষিনে অবস্থিত। উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশাপাশি ১৯৯৭ সাল থেকে গাজীপুর ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড উচ্চ বিদ্যালয়ের বালিকা শাখা হিসেবে পরিচালিত হয়ে আসছিল। ২০০৪ সালে এটি গাজীপুর ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড জুনিয়র বালিকা বিদ্যালয় হিসেবে বোর্ডের স্বীকৃতি প্রাপ্ত হয় এবং ২০০৮ সালে এটি স্বতন্ত্র মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় হিসেবে বোর্ডের স্বীকৃতি লাভ করে।
বিদ্যালয়ের গৌরবগাথাঃ
অত্র বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আজ দেশ ও দেশের বাইরে দায়িত্বশীল পদে অধিষ্ঠিত হয়ে দেশের সেবা করে যাচ্ছে। নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা তাদের অনুপ্রেরণায় অগ্রজদের পদাঙ্ক অনুসরণ করেছে। বিদ্যালয়ের বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল বরাবরই ভাল। প্রতি বছর এ বিদ্যালয় থেকে অসংখ্য শিক্ষার্থী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, বুয়েটসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়, যা বিদ্যালয়ের সুনাম বৃদ্ধি করে চলেছে। উল্লেখ্য ২০১৭ সালে বুয়েটে ৪ জনসহ অনেক ছাত্র কুয়েট, রুয়েট, চুয়েট, আইইউটি, মেডিকেল ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। গাজীপুর ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড উচ্চ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ভাল ফলাফল ও সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিতে কৃতিত্বের স্বাক্ষর বহন করে চলেছে। ১৯৯৫ সালে বিজ্ঞান বিভাগে ঢাকা বোর্ডের সম্মিলতি মেধা তালিকায় আবু হেনা মোঃ রজিবুল ইসলাম ১১তম, নাজমুদ্দিন মোঃ এহসান উল্লাহ ১৩তম স্থান। ১৯৯৭ সালে মানবিক বিভাগে মোঃ সালাহ উদ্দিন ১৪তম স্থান, ১৯৯৮ সালে বিজ্ঞান বিভাগে ঢাকা বোর্ডে মোঃ তারিকুল ইসলাম ৮ম স্থান এবং মাকসুদা খাতুন ১৮তম স্থান অধিকার করে বিদ্যালয়ের সম্মান বৃদ্ধি করেছে। ১৯৯৮ সালে ভাল ফলাফলের দিক থেকে ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড উচ্চ বিদ্যালয় ঢাকা বোর্ডে ৭ম স্থান লাভ করে। ২০০৬ সালে মোঃ ইমতিয়াজ রশিদ জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষায় গাজীপুর জেলার মধ্যে ১ম স্থান অধিকার করে বিদ্যালয়ের সুনাম বৃদ্ধি করেছে।
২০১০ সাল থেকে বালিকা বিদ্যালয় এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে আসছে এবং প্রতি বছরই শতভাগ পাশসহ কৃতিত্বের দাবী রাখছে। ছাত্রীরা এস.এস.সি পাশ করে ভাল ভাল কলেজে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে এবং পরবর্তী পর্যায়ে উচ্চ শিক্ষা তথ্য বুয়েট, কুয়েট, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে অধ্যয়নের সুযোগ পাচ্ছে। ২০১৭ সালে এ বিদ্যালয় থেকে পাশ করা ছাত্রীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ কুয়েট, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়ন করার সুযোগ পেয়েছে।
সহপাঠক্রমিক কাযক্রম ও অন্যান্যঃ
ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করে কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। ১৯৯৩ সালে টেলিভিশন বিতর্ক প্রতিযোগিতায় রানার্স আপ এবং একই সাথে রেডিওতে জ্ঞান জিজ্ঞাসা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। ২০১০ সালে ৯ম শ্রেণির ছাত্র ইমতিয়াজ আহম্মেদ তাজ হামদ্/নাত প্রতিযোগিতায় জাতীয় পর্যায়ে তৃতীয় স্থান লাভ করার গৌরব অর্জন করে। ১৯৯৬ সালে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় গাজীপুর জেলার মধ্যে শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। ২০১৬ সালে জাতীয় স্কুল টুর্নামেন্টে অত্র স্কুল গাজীপুর জেলায় চ্যাম্পিয়ন হয়ে অঞ্চল পর্যায়ে উন্নীত হয়।
একইসঙ্গে বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। বি.ও.এফ কর্তৃক আয়োজিত ২১শে ফেব্রুয়ারী ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে দেয়ালিকা প্রতিযোগিতায় (০৫ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে) অত্র বিদ্যালয় পর পর ০৩ বছর (২০১৩, ২০১৪, ২০১৫) চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। সশস্ত্র বাহিনী দিবসের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় সারাদেশের ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড স্কুল, পাবলিক স্কুল ও কলেজে সমূহের মধ্যে ২০১৫ সালে খ-গ্রুপে ৩য় ও ৪র্থ স্থান অধিকার করে এবং ২০১৬ সালে ক-গ্রুপে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় ১ম ও ৪র্থ স্থান অধিকার করে। তাছাড়া মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতায় ২০১৬ সালে ৯ম শ্রেণির ০১ জন শিক্ষার্থী জেলা পর্যায়ে ১ম স্থান অর্জন করে।
উপসংহারঃ
গাজীপুর ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের বিদ্যালয় দু’টি আপন মহিমায় উদ্ভাসিত। এই বিদ্যালয় গাজীপুর সদর এলাকায় আলাদা একটি বৈশিষ্ট্য অর্জন করেছে। বিদ্যালয়ের অবস্থানের কারণে এলাকাবাসীকে আকৃষ্ট করে। নিরাপত্তা ব্যবস্থাও অনেক নিয়ন্ত্রিত। অভিভাবকগণ তাদের সন্তানদের এ বিদ্যালয়ে প্রেরণ করা নিরাপদ মনে করেন। ফলাফলের দিক থেকেও এই বিদ্যালয় সকলের কাছে আকর্ষণীয় বিদ্যাপীঠ। সেশন শুরু থেকেই এ বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য অভিভাবকদের তৎপরতার শুরু হয়। যেহেতু বিদ্যালয়ে দু’টি ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন তাই ভর্তির ক্ষেত্রে প্রতিরক্ষা বিভাগে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সন্তানদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভর্তি করা হয়। এ বিদ্যালয় দিন দিন উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিদ্যালয়ের উন্নয়নের ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রয়েছে। তাদের নির্দেশনায় ও সুপরামর্শে বিদ্যালয়টি সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য সকলের সহযোগিতা ও দোয়া একান্ত ভাবে কাম্য।